কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য নেয়া এক প্রকল্পে প্রতি পরামর্শকে খরচ বেড়ে এক কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত হচ্ছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শক সেবা খরচ হচ্ছে প্রতিটির জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি, যা এর আগে ২ কোটি টাকা ছিল। এর ফলে সার্বিকভাবে প্রকল্পের খরচ বাড়ছে ২৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদনের জন্য। বিদেশী সাহায্যের একটা বড় অংশই এভাবে চলে যায় পরামর্শক খাতে। প্রয়োজন হোক বা না হোক অর্থ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের শর্তানুযায়ী পরামর্শক নিতেই হয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মূল অনুমোদিত ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্পটি ৩৩৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান এই প্রকল্পটি ২০২১ সালের আগস্টে শেষ হওয়ার কথা। তিন বছরের এই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে ৪ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে প্রদানের জন্য ২০১৯ সালের ৮ মে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এবং ৬০ হাজার রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীকে কমিউনিটি সেবা প্রদান সম্পর্কিত ডব্লিউএফপি কর্তৃক ব্যবহৃত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করার কথা। এখন এই প্রকল্পের ব্যয় ২৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ধরা হচ্ছে ৫৯৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। একই সাথে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে।
ব্যয় বিভাজন থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১০ জন ব্যক্তি পরামর্শক এবং চারটি প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শক নিয়োগের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেখানে এই খাতে মূল প্রকল্পে খরচ ধরা হয় ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ব্যক্তি পরামর্শকের জন্য ১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শকের জন্য ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এখন সংশোধনীতে এসে এই ব্যয় মোট ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরো ২২ মাস বৃদ্ধি হতে হচ্ছে। ফলে ব্যক্তি পরামর্শক খাতে খরচ বেড়ে মাথাপিছু ১ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা হয়ে মোট ১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর প্রাতিষ্ঠানিকের ক্ষেত্রে প্রতিটির জন্য ব্যয় আড়াই কোটি টাকার বেশি হারে মোট ১০ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাবনায় বলছে, গত ২০১৭ সালের ২ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চরম সহিংসতা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আনুমানিক সাত লাখ মানুষকে বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজার জেলায় অনুপ্রবেশে বাধ্য করে। উখিয়া ও টেকনাফ দু’টি উপজেলায় বেশির ভাগ ডিআরপি বসতি স্থাপন করেছে। তরুণ ও তরুণীদের কোনো উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত না করতে পারলে বিভিন্ন বিপথগামী কর্মকাণ্ডে তারা জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ দেশের মানুষকে কলুষিত করতে পারে। এ জন্য ডিআরপিদের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিদ্যমান সেবাগুলোর মান উন্নীতকরণ ও ক্যাম্পের জনগণের রিজিলেন্স বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের অনুদান সহায়তায় প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি আন্তর্জাতিক অনুদান সহায়তার একটি প্রকল্প। এখানে অনুদান দাতাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরামর্শক নিতে হচ্ছে। তা ছাড়া সাইক্লোন শেল্টার তৈরি, বিভিন্ন স্থাপনা কাজের জন্য কাঠামোগত ডিজাইনও গুরুত্বপূর্ণ। আর এসবের জন্য পরামর্শক সেবা গ্রহণ করা জরুরি। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ১৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এখানে আর্থিক অগ্রগতি ৪৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ওই অর্থ ব্যয়ে বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ওয়ার্কফেয়ার এবং কমিউনিটি সার্ভিস কার্যক্রমের মাধ্যমে সেবার আওতা বৃদ্ধির জন্য ২ এপ্রিল অতিরিক্ত ৩ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দেয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অতিরিক্ত এই অর্থায়ন অন্তর্ভুক্ত করা এবং কমিউনিটি ওয়ার্কফেয়ার ও সার্ভিস কার্যক্রমের কলেবর বাড়ানোসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় ও বাস্তবায়নে প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ দিকে এডিপি পর্যালোচনা সভায় পরামর্শক সেবার কথা উল্লেখ করেন কমিশনের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ। তার মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাধারণ প্রকৃতির প্রকল্পেও আন্তর্জাতিক বা দেশীয় পরামর্শক সার্ভিস নেয়া হয়। অথচ ওই সব কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য পরামর্শক সেবার প্রয়োজন হয় না। এতে করে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অথচ কোনো ধরনের ভ্যালু যোগ হয় না। তিনি বলেন, এই পরামর্শক সেবার ব্যয় প্রকল্প সাহায্য থেকে নেয়া হয়ে থাকে। এটি মূলত সরকারি অর্থায়ন থেকে (জিওবি) সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। প্রয়োজন না থাকলে এই সেবা না নেয়াই উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
Leave a Reply